Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বিজেআরআই তোষা পাট ৯ (সবুজ সোনা)-এর চাষাবাদ প্রযুক্তি

বিজেআরআই তোষা পাট ৯ 
(সবুজ সোনা)-এর চাষাবাদ প্রযুক্তি
মো: মুকুল মিয়া১ ড. শেখ শরীফ উদ্দিন আহমাদ২ ড. মো: গোলাম মোস্তফা৩ ড. নার্গীস আক্তার৪
পাট বাংলাদেশের একটি অর্থকারী ফসল। এটি একটি পরিবেশবান্ধব ফসল হওয়ায় দিন দিন এর গুরুত্ব¡ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ পাট ও পাটজাতীয় পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বব্যাপী প্রথম এবং পাট উৎপাদনে ভারতের পরে অর্থাৎ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। তবে এদেশে কিছু কিছু ফসলের তুলনায় পাটের আবাদি জমি কম হলেও কৃষক পর্যায়ে পাটের উচ্চফলনশীল জাতের চাষাবাদ দিন দিন বাড়ছে, ফলে খুব শীঘ্রই বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ পাট উৎপাদনশীলতায় প্রথম স্থান দখল করবে বলে আশা করি।
বিজেআরআই তোষা পাট ৯ এর উদ্ভাবন
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) তোষা পাটের (ঈড়ৎপযড়ৎঁং ড়ষরঃড়ৎরঁং খ.) দ্রুত বর্ধনশীল ও উচ্চফলনশীল একটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে যা বিজেআরআই তোষা পাট ৯ (সবুজ সোনা) নামে পরিচিত। জাতটি ২০২৩ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত  হয়েছে। তোষা পাটের ভারতীয় জাত জেআরও-৫২৪ এবং একটি দেশীয় আগাম পরিপক্ব জার্মপ্লাজম (এক্সেশন-১৭৪৯) এর মধ্যে সংকরায়নের (হাইব্রিডাইজেশন) মাধ্যমে জাতটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। জাতটি কৃষকের জমিতে বিভিন্ন পরীক্ষণে ভাল ফলন দিয়েছে এবং দেশব্যাপী ভূমি ও আবহাওয়া উপযোগী বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর আঁশের রং উজ্জ্বল সোনালি, ছালের পুরুত্ব¡ বেশি এবং পাটকাঠি তুলনামূলকভাবে শক্ত। জাতটির পাতা চিকন হওয়ায় একক জায়গায় অধিক সংখ্যক গাছ রাখা যায় বিধায় আঁশের অধিক ফলন পাওয়া যায়। 
জাতের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
৭ জাতটি সম্পূর্ণ সবুজ এবং লম্বা চিকন পাতা বিশিষ্ট। কম বয়সে এর গাছ গাঢ় সবুজ বর্ণের এবং পাতার কিনারা ঢেউ খেলানো হয়। পাতার দৈর্ঘ্য প্রস্থ অনুপাত ৩:১, উপপত্র লম্বা এবং সংখ্যায় ২-৩টি।
৭ পরিণত পাতা ছাগলের কানের মতো ঝুলে থাকে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় গাছের সাথে পাতার কৌণিক মান প্রায় ৯০-১০০ ডিগ্রি থাকায় সূর্যের আলোর সাহায্যে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে গাছে খাদ্য তৈরির তেমন কোন সমস্যা হয় না।  
৭ জাতটি আগাম চাষোপযোগী এবং সহজে এর বীজ ঝরে পড়ে না। এর ১০০০ বীজের ওজন প্রায় ১.৭৫ গ্রাম এবং বীজের রং গাঢ় সবুজাভ নীল।
প্রচলিত জাতের তুলনায় এর বৈশিষ্ট্য
প্রচলিত অন্যান্য জাতের চেয়ে এটি দ্রুত বর্ধনশীল ও আগাম কর্তন উপযোগী। জাতটি অধিক ফলনশীল, আঁশের মান ভালো এবং রং উজ্জ্বল সোনালী।
বপনকাল
তোষা পাটের এই জাতটি চৈত্রের প্রথম থেকে বৈশাখের প্রথম পর্যন্ত (মধ্য মার্চ থেকে মধ্য এপ্রিল) যে কোন সময় বপন করা যায়। তবে ৩০ মার্চ হতে ১০ এপ্রিল এর মধ্যে বীজ বপন করলে আঁশের সর্বোচ্চ ফলন পাওয়া যায়। বীজ বপনের ১০০ দিন পরেও গাছ কর্তন করে আঁশের ফলন ভাল পাওয়া যায়, যা ভারতীয় জাত জেআরও-৫২৪ থেকে ১.৮% বেশি।
জমি নির্বাচন
জাতটি চাষের জন্য পানি নিষ্কাশনের সুবিধাসহ উঁচু বা অপেক্ষাকৃত মধ্যম উঁচু উর্বর জমি উত্তম। মধ্যম নিচু জমিতে আগাম বন্যার সম্ভাবনা না থাকলে জাতটি চাষ করা যায়।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
জমি ভালোভাবে চাষ করে প্রয়োজনমতো গোবর (১০০ মণ/হেক্টর) ও অন্যান্য রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের পর মই দিয়ে জমি সমান করে দিতে হবে। মাটির উর্বরতা মধ্যম মাত্রার হলে এবং গোবর সারপ্রয়োগ করতে না পারলে হেক্টরপ্রতি ইউরিয়া ২১৭ কেজি,  টিএসপি ২০ কেজি, এমওপি ৫০ কেজি ও সালফার ১৫ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। তবে গোবর সার প্রয়োগ করা হলে প্রতি এক টন শুকনো গোবর সার ব্যবহারের জন্য ১১ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি টিএসপি, এবং ১০ কেজি এমওপি সার নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির সময় অর্ধেক ইউরিয়া ও অন্যান্য রাসায়নিক সার পূর্ণমাত্রায় মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া ৪০-৪৫ দিন পর দ্বিতীয় নিড়ি প্রদান শেষে উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে সার প্রয়োগের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকা প্রয়োজন।
বীজ বপন
সারিতে বা ছিটিয়ে বীজ বপন করে জাতটি চাষ করা যায়। সারিতে বপন করলে হেক্টরপ্রতি ৪.৫-৫.০ কেজি এবং ছিটিয়ে বপন করলে ৫-৭ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। সারি থেকে সারি ৩০ সেমি. ও গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৫-৭ সেমি. হলে ভালো হয়।
পরিচর্যা
বীজ বপনের এক থেকে দুই সপ্তাহ পর জমির জো অনুযায়ী আঁচড়া বা হো দিতে হবে। ফলে জমিতে আগাছার উপদ্রব কমবে এবং মাটিতে বায়ু চলাচলের ফলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হবে। গাছের বয়স ২০-২৫ দিন এবং ৪০-৪৫ দিনে দুইবার নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। প্রতিবার নিড়ি দেওয়ার সময় রোগাক্রান্ত, দুর্বল এবং চিকন গাছ তুলে ফেলতে হবে। গাছে রোগবালাই দেখা দিলে আক্রমণের ধরন অনুযায়ী বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে। পাটের অধিক ফলনের জন্য প্রাথমিক পরিচর্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিড়ানি ও পাতলাকরণে অবহেলা করলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ফলনও কম হয়।
ফলন
হেক্টরপ্রতি গাছের সংখ্যা ৪.০-৪.৫ লক্ষ রাখলে আঁশের কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যায়। অনুকূল আবহাওয়া ও উপযুক্ত পরিচর্যায় কৃষকের জমিতে জাতটি ১১০ দিন বয়সে কর্তন করলে আঁশের গড় ফলন ৩.২৫ টন/হেক্টর বা বিঘাপ্রতি ১১.৬ মণ পাওয়া যায়।
পাটকাটা, জাগ দেওয়া, ধোয়া ও শুকানো
বপনের ১০০ দিন পর থেকে প্রয়োজনমতো যে কোন সময়ে পাট কাটা যায়। তবে বেশি দেরিতে কাটলে ফলন বেশি হয় কিন্তু আঁশের গুণমান কমে যায়। পাট গাছ আঁটি বেঁধে পাতা ঝরানোর পর গোড়া নরম করে বা ৩/৪ দিন ১ ফুট পানিতে ডুবিয়ে রেখে পরে পরিষ্কার পানিতে জাগ দিয়ে খড় বা কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। কোন অবস্থাতেই জাগের উপর মাটি বা কলাগাছ দেয়া যাবে না। এতে করে আঁশের রং নষ্ট বা অনুজ্জ্বল হয়। মোটামুটি ১৮ দিনে জাতটির আঁশের পঁচন সম্পন্ন হয়। আঁশ যাতে বেশি পচে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আঁশ যত পরিষ্কার করে ধোয়া যায় ততই উজ্জ্বল হয়। ধোয়া আঁশ আড়ে শুকানো উচিত। ভেজা মাটিতে শুকালে ময়লা লেগে আঁশের মান খারাপ হয়ে যায়। এই জাতের কাটিংস এর পরিমাণ কম (১%) হওয়ায় আঁশের ফলন ভাল পাওয়া যায়।
বীজ উৎপাদন
আঁশের জন্য বপনকৃত মাতৃগাছ থেকে বেশি পরিমাণে ভালো বীজ পাওয়া যায় না। তাই কাক্সিক্ষত পরিমাণ বীজ উৎপাদনের জন্য নিম্নোক্ত তিনটি পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। 
১। মাতৃগাছের টপ কাটিং পদ্ধতিতে বীজ উৎপাদন
ধারালো ছুরি বা চাকু দিয়ে ১০০ দিন বয়সী সুস্থ গাছের ডগা থেকে ৬০-৮০ সেমি. পরিমাণ কেটে নিয়ে বোটা ছাড়া বড় পাতাগুলো ফেলে দিয়ে তা থেকে ৩-৪টি খ- (২০-২৫ সেমি. সাইজের প্রতিটি খ-ে ৩-৪টি পর্বসহ) বাঁকা বা তির্যকভাবে (৪৫ ডিগ্রি কোণ) কেটে নিয়ে আটি বেঁধে গোড়া ছত্রাকনাশক এর দ্রবণে (১০ লি. পানিতে ৫মিলি. ইন্ডোফিল বা ডায়থেন এম-৪৫) চুবিয়ে কাটিং প্রস্তুত করতে হবে। কাটিং তৈরি সময় এর গোড়া কোনভাবেই ক্ষত হওয়া বা থেঁতলানো যাবে না। প্রস্তুতকৃত কাটিং রসযুক্ত জমিতে (জলাবদ্ধ নয়) সারি থেকে সারি ৩০ সেমি. এবং কাটিং থেকে কাটিং ১৫ সেমি. দূরত্বে উত্তরদিকে ৪৫ ডিগ্রি কোণে কাঁত করে তির্যকভাবে কাটা অংশ নিচে রেখে সাবধানে লাগাতে হবে যাতে গোড়া থেঁতলে না যায়। প্রয়োজনে জমিতে রস এর জন্য হালকা সেচ দিতে হবে। রোপণকৃত কাটিং হতে প্রচুর শাখাপ্রশাখা বিস্তার লাভ করে প্রচুর পরিমাণ বীজ উৎপন্ন হয় এবং বীজের গুণগত মানও ভালো হয়। এ পদ্ধতিতে প্রতি শতাংশে ২.০-২.৫ কেজি বীজ সহজেই উৎপন্ন করা যায়।
২। নাবী বীজ উৎপাদন পদ্ধতি
আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ হতে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে জমির পানি সরে যাওয়ার পর জমিতে জো হলে ২/৩ বার চাষ দিয়ে বীজ বপন করা হয়। বপনের পর একবার মই দিয়ে মাটি সমান করে দিতে হবে। পরে স্বাভাবিকভাবে বীজ গজিয়ে চারা হবে। এই চারা ৩-৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ৫০-৬০ দিন বয়সে চারাটির শাখাপ্রশাখা বিস্তার লাভ করে, ফুল ও ফল হয় এবং ফল থেকে প্রচুর পরিমাণ বীজ উৎপন্ন হয়। এই পদ্ধতিতে প্রতি শতাংশে ৩.০-৩.৫ কেজি বীজ সহজেই উৎপন্ন করা সম্ভব।
৩। চারা রোপণ পদ্ধতিতে বীজ উৎপাদন
উঁচু জমিতে বীজ বপনপূর্বক চারা তৈরি করে ৩০-৪৫ দিন বয়সের চারা ভেজা জমিতে রোপণ করে সন্তোষজনক পরিমাণ বীজ উৎপন্ন করা যায়। এই পদ্ধতিতে ক্রতি শতাংশে ৩.০-৩.৫ কেজি বীজ উৎপন্ন করা সম্ভব। আপৎকালীন প্রযুক্তি হিসেবে এই পদ্ধতি খুবই কার্যকরী।
উপযুক্ত শস্যক্রম
আমাদের দেশে বোরো ধান কাটার পর এই জাতটি বপন করলে একই জমিতে তিন/চার ফসলের শস্যবিন্যাস আনা সম্ভব।
পাট - রোপা আমন - গম/আলু।
পাট - রোপা আমন - বোরো ধান।
রোপাপাট - রোপা আমন - বোরো ধান।
পাট -রোপা আমন - পাটবীজ + শীতকালীন শস্য।
‘পাট একসময়ের সোনালি আঁশ আমাদের দেশের। পাটের চাহিদা কিন্তু কোনো দিন শেষ হবে না। পাটজাত পণ্য পরিবেশবান্ধব। আমরা পাটের জিনোম আবিষ্কার করতে পেরেছি। কাজেই এখান থেকে আমরা অনেক ধরনের পণ্য উৎপাদন করতে পারি। পাটের পাতা থেকে শুরু আঁশ, পাটখড়িও কাজে লাগে। পাটকে আমাদের এখন গুরুত্ব¡ দিতে হবে। আমাদের পাট ইন্ডাস্ট্রি যেগুলো সরকারি ছিল সেগুলো আমরা এখন উন্মুক্ত করে দিয়েছি।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পাটে ধন, পাটে মান, পাট চাষে লাভবান।
পাট প্রকৃতির অপূর্ব দান, পরিবেশে রাখে বিরাট অবদান।
 
লেখক : ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, প্রজনন বিভাগ, বিজেআরআই, ঢাকা-১২০৭, মোবাইল: ০১৫২০০৮৩০৮৮, ই-মেইল: সঁশঁষনলৎরনৎববফরহম@মসধরষ.পড়স

COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon